Details
689

গণতন্ত্রের নামে ঢাবিকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছেঃ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান

গণতন্ত্রের নামে ঢাবিকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছেঃ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান

 

গণতন্ত্রের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নয়। আর এটি ঘটেছে একটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।

 

রবিবার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে গত জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার আয়োজন করছে। গত পাঁচ মাসের প্রতি মাসে একটি করে বিষয়ের ওপর তিন দিনব্যাপী ওয়েবিনার হয়েছে। এর শেষ ধাপে ‘উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ’ বিষয়ে ওয়েবিনারের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন হয় রবিবার।



এসময় সলিমুল্লাহ খান বলেন, আমার ৩৮ বছরের শিক্ষকতার জীবন এবং আমি যদি ৪৫ বছরের ছাত্র জীবনের সময়কাল সহ যদি বলি তাহলে বলবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
ওয়েবিনারের প্রথম পর্বে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গে কী ঘটেছে: পুঁজিবাদের শেষ পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার সংকট’ বিষয়ে বক্তব্য দেন সলিমুল্লাহ খান। পরে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ বছরে অনেক বদলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শিক্ষাদানমূলক এবং ঐক্য বা সমতামূলক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন এটি একটি তদারকিমূলক ও অধিভুক্তিমূলক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষাদানের লক্ষ্য থেকে সরে গেছে।

 

কোভিড পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেমন হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি এ বিপ্লব ভবিষ্যত বাণী করবো না। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কি? এটি নতুন কিছু নয়। আপনি প্রথম শিল্প বিপ্লব বুঝতে না পারলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বুঝতে পারবেন না।



তিনি বলেন, আমার ছাত্র ও শিক্ষকজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, তবে এটি এর ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে৷ এটি পূর্ববঙ্গে একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি করেছিল, যা ছিল সময়ের চাহিদা। পাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে।

 

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে প্রাথমিকভাবে শিখন এবং গবেষণার কেন্দ্র। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষাদানের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থিত হলেও বর্তমান পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয়ই চিন্তার জায়গায় ওয়েস্টার্ন।

 

ওয়েবিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ধর্মীয় ও সেক্যুলার—উভয় ধরনের কর্তৃত্ববাদের যুগে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে এ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে হলে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা প্রয়োজন। যাঁদের এই নিরাপত্তাটি রয়েছে, তাদের প্রয়োজনে রাষ্ট্র ও বিভিন্ন বিশ্বাসের ধর্মীয় সংগঠন-প্রতিষ্ঠানের আরোপিত নীতির সমালোচনা-পর্যালোচনায় এটিকে ব্যবহার করা উচিত।



রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রওনক জাহানের সঞ্চালনায় এই পর্বে কানাডাপ্রবাসী অধ্যাপক হাবিবা জামান বক্তব্য দেন। রাজধানীর সেন্ট্রাল উইমেন’স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক পারভীন হাসানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারের দ্বিতীয় পর্বে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এস এম শামীম রেজা, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক মো. তৌহিদুল ইসলাম এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষক নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস।