Details
1395

আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব (পারসোনালিটি) গড়ে তোলার কার্যকরী টিপস

আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব (পারসোনালিটি) গড়ে তোলার কার্যকরী টিপস

ভালো ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়ার মানে অন্যদের অনুসরণ করা নয় এর অর্থ আপনার মাঝে যে ভালো দিকটি আছে সেটি খুঁজে বের করা এবং নিজেকে সবার কাছে তুলে ধরা। নিজেকে সংশোধন করার জন্য মানুষের সব সময় সুযোগ থাকে কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আপনি নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট আছেন কিনা?

 

নিজের ব্যক্তিত্বকে ভেতর থেকে জাগিয়ে তোলার উপায়ঃ

১. আপনার নিজস্বতা তুলে ধরুন:

নতুন কারো সাথে পরিচিত হওয়ার সময় আপনি নিজেকে আকর্ষণীয় ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করুন। যদি তাদের সাথে আপনার কোন বিষয় মিল না থাকে তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই তাদের সাথে হালকা কথাবার্তা চালিয়ে যান এবং বন্ধুসুলভ ভাবে প্রশ্ন করুন। ধরে নিন আপনি একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছেন এবং সেখানে নতুন কিছু বন্ধু বানাতে চান কিন্তু কোন একজনের সাথে কথা বলতে আপনার বিরক্ত লাগছে, সেক্ষেত্রে কোনরকম অভিনয় না করে বিনয়ের সাথে আলাপচারিতা শেষ করুন।

 

২. ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করুন: 

সব সময় ভালো কিছুর খোঁজ করুন। ইতিবাচক ধারণা রাখুন এবং হাসিখুশি থাকুন। কোন কিছু আপনার বিরক্তির কারণ হওয়া সত্ত্বেও হাসিখুশী ভাব ধরে রাখতে হবে এমনটা নয়, সব কিছুর মধ্যে ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন এবং তা নিয়ে আনন্দে থাকুন।

 

৩. জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা করবেন না:

অন্যদের কাছে জনপ্রিয় হওয়া যদি আপনার মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে, তবে আপনি আপনার আসল উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন তাই নয় কি? গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এমন একটি ফ্রেন্ডসার্কেল তৈরি করুন, যাদের প্রতি আপনি আন্তরিক এবং যারা আপনার প্রতি অমায়িক। এমন কিছুর পেছনে ছুটবেন না যে, আপনার অসংখ্য বন্ধু থাকতে হবে ভেবে শুধু সংখ্যায় বন্ধু বাড়াচ্ছেন। যাদের সাথে থাকলে আপনার মন থেকে ভালো লাগে শুধু তাদের সঙ্গে থাকুন। যদি সেটা সংখ্যায় বেশি হয় তাহলে ভাল আর যদি সংখ্যা মাত্র দুই-তিনজন হয় তাহলেও চলবে।

 

৪. নতুন কিছু শিখতে নিজের আগ্রহ বাড়ান: 

যেকোন বিষয়ে কথা বলার আগ্রহ থাকাটা ভালো ব্যক্তিত্বের অন্যতম একটি প্রধান গুণ। এর মানে এমন না যে কোন একটি দুর্বোধ্য বিষয় শুধুমাত্র আপনার আগ্রহ আছে বলেই সেটা শিখে ফেলতে হবে। আবার আপনি যদি খুব সহজে খুব মজার করে কোন কিছু অন্যদেরকে বোঝাতে বা শেখাতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনি কি পছন্দ করেন কি করেন না সেটা ব্যাপার না। তাই প্রতিদিন কিছু না কিছু অন্তত পড়ুন। বিনোদনমূলক কিছু দেখুন এবং নতুন নতুন শখ তৈরীর মাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়ান।

 

৫. যেকোন বিষয়ে মতামত প্রকাশ করুন:

এটিও ঠিক আগ্রহ বাড়ানোর মতই ব্যাপার আপনি যখন অন্যদের সাথে কোন একটি বিষয়ে কথা বলতে যাবেন খুব স্বাভাবিকভাবে আপনি চাইবেন সে বিষয়টি সম্পর্কে আপনার ধারণা স্পষ্ট থাকুক। রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন অথবা অন্য যে কোন ব্যাপারে আপনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করুন । কথা বলতে গিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করুন। কারো সাথে সমর্থন নিয়ে বা দ্বিমত হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। নম্রভাবে যুক্তি উপস্থাপন করুন যারা নিজের মত প্রকাশ করতে সক্ষম এমন ব্যক্তিত্বকে মানুষজন পছন্দ করে।

 

৬. প্রশ্ন করা এবং অন্যের প্রতি আগ্রহী হওয়া:

ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলতে এটি সহজ কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। মানুষজন নিজেদেরকে নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে। আপনি যদি কৌতুহলী মানুষ হন তবে কারো সাথে কথা বলে আপনি তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। যার সাথে আপনি কথা বলছেন তার যে বিষয়ে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি তা খুব ভালোভাবে জানার জন্য প্রশ্ন করতে থাকুন। বেশিরভাগ লোকই তাদের পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে। মনে করুন, আপনি কারও পছন্দ সম্পর্কে জানতে চান এজন্য তাকে প্রশ্ন করার দরকার নেই। শুধু তার কথার সাথে তাল মিলিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা থেকে প্রশ্ন করুন। হতে পারে আপনার পাহাড়ে বাইক চালাতে ভাল লাগে এবং সে ক্ষেত্রে আপনি কতটা ভালবাসেন সে বিষয়ে কথা না বলে, লোকটিকে তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারেন। 

 

৭. নিজের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন: 

আপনি যেমন নন নিজেকে তেমন ভাবে প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই। আত্মবিশ্বাসী হয়ে অন্যের সাথে কথা বলুন। যেকোনো বিষয়ে যুক্তিযুক্তভাবে নিজেকে উপস্থাপন করলে অন্যরা আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে। মানুষ তাকেই বেশি পছন্দ করে যে ভেতরে বাইরে একজনই। যার মধ্যে কোনো লুকোচুরি নেই। তাই নিজের ব্যক্তিত্বের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখুন।

 

৮. হাসিখুশি ও চিন্তামুক্ত থাকুন:

অন্যের জীবনে কিছু আনন্দপূর্ণ মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য তারা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। অন্যের অবস্থান নিয়ে কখনো হাসি ঠাট্টা করবেন না। সব কিছুর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন। কোন সমস্যার মুখোমুখি হলে সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় না থেকে কিংবা সেই বিষয়ে অভিযোগ না করে অন্যদের সাথে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। সবাই আপনার ব্যক্তিত্বের প্রশংসা করবে। এটি আপনাকে ভালো থাকতে সাহায্য করবে।

 

৯. সহানুভূতিসম্পন্ন হওয়ার চেষ্টা করুন:

একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ আপনি যেমনই হন না কেন যদি আপনি অন্যদের প্রতি সহানুভূতি পূর্ণ মনোভাব রাখেন, তবে শুধুমাত্র তারাই আপনাকে অপছন্দ করবে যারা আসলে আপনার প্রতি ঈর্ষান্বিত। অন্যের প্রতি রাগান্বিত হওয়ার কিছু নেই। কেউ যদি আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, তবে মনে করার চেষ্টা করুন আপনার কোন কাজটি তাকে এমন ব্যবহার করতে বাধ্য করেছে। হতে পারে তারা তাদের জীবনের কঠিন পরিস্থিতির মাঝে অবস্থান করছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা খুবই ভালো মানুষ অন্যের মাঝে ভাল দিক খোঁজার চেষ্টা করুন। আপনাকে বোকাসোকা হতে হবে এমনটা নয় আপনি সংশয়পূর্ণ থাকতেই পারেন কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে এজন্য আপনি অন্যের সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন।

 

১০. স্থির, শান্ত এবং নিরদ্বেগ থাকা: 

সব সময় নিজেকে স্থির রাখুন বিশেষ করে যেসব পরিস্থিতিতে অন্যেরা সহজে ঘাবড়ে যায়। সেসব ক্ষেত্রে যদি আপনি নিজেকে শান্ত রাখতে পারেন। তাহলে সবার কাছে আপনার মূল্যায়ন বেড়ে যাবে। যেটা যেভাবে ঘটে তাকে সেভাবেই গ্রহণ করুন। খুব বেশি উত্তেজিত বা একেবারে নিষ্ক্রিয় থাকা কোনটা কাজের না। এই ব্যাপারটা আপনাকে সচেতন ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। আপনার এই গুনটি সবার কাছে আপনার গুরুত্ব বাড়িয়ে দেবে। যদি কেউ কোন সমস্যার মধ্যে থাকে, তবে তাকে প্রফুল্ল এবং চিন্তা মুক্ত রাখতে চেষ্টা করুন।

 

১১. সবার সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখুন:

কারো সম্পর্কে সহজেই কোনো সিদ্ধান্তে আসবেন না। যদি আপনার কাউকে পছন্দ না হয় তবুও তাকে অন্তত একটি সুযোগ দিন। এমন সুযোগ নিশ্চয়ই আপনিও চান তাই নয় কি? কারো কাছে ভালো ব্যবহার পেতে হলে অবশ্যই তার সাথে আপনাকেও ভালো ব্যবহার করা উচিত। যারা আপনার থেকে বেশি জনপ্রিয় কিংবা যাদের কাছ থেকে আপনি সাহায্য পেতে পারেন, শুধুমাত্র তাদেরকে বন্ধু বানাতে হবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। সবার সাথে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করুন সবসময় ভাল সম্পর্ক বজায় রাখুন। যাদের সাথে থাকতে আপনার ভালো লাগে অবশ্যই তাদের সাথে বেশি সময় দিন।  

 

-----------------------

আতিক মাহমুদ