Details
1340

নক্ষত্রের বিস্ফোরণ

নক্ষত্রের বিস্ফোরণ

মুসা আহমেদ আকিব

 

“নক্ষত্রের হইতেছে ক্ষয়,

নক্ষত্রের মতন হৃদয়

পড়িতেছে ঝ’রে—

ক্লান্ত হ’য়ে—শিশিরের মতো শব্দ ক’রে।

জানোনাকো তুমি তার স্বাদ

তোমারে নিতেছে ডেকে জীবন অবাধ,

জীবন অগাধ

 

জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়লে মনে হয় মানুষটা আকাশ প্রেমী ছিলেন। ছিলেন তো বটেই, নাহলে কী কেউ সে আমলে ‘নক্ষত্রের হইতেছে ক্ষয়’ এধরনের লাইন লিখতে পারে! আজকে আমাদের আলোচনা নক্ষত্রের বিস্ফোরণ নিয়ে। তবে তার সাথে নক্ষত্রের ক্ষয়েরও সম্পর্ক আছে। বুড়ো হলে যে শুধু আপনি আমি না, নক্ষত্রগুলোও ক্ষয় থেকে রক্ষা পায় না তা জেনেও নাহয় একটু শান্তনা পাবেন!

 

প্রতি সেকেন্ডেই মহাবিশ্বের কোথাও না কোথাও নক্ষত্র বিস্ফোরিত হচ্ছে। নক্ষত্রের এই বিস্ফোরণ পরিচিত সুপার নোভা হিসেবে। নক্ষত্রগুলোর মৃত্যুর আগে তাদের জীবনের সবটুকু অর্জন মহাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয় বিস্ফোরণের মাধ্যমে। তবে এ বিস্ফোরণ ঘটানো ছোটখাট কোনো নক্ষত্রের পক্ষে সম্ভব নয়। সূর্য থেকেও কমপক্ষে ১৫ গুণ বড় নক্ষত্রের পক্ষেই সম্ভব সুপার নোভা ঘটানোর (সে হিসাবে আমাদের সূর্যকে ছোটই বলা যায়!)।

 

কিন্তু কেন হয় এ বিস্ফোরণ? নক্ষত্রের কেন্দ্রকে অনেক বড় একটা নিউক্লিয়ার চুলা হিসেবে কল্পনা করে নিতে পারেন। কেন্দ্রের হাইড্রোজেন ফিউশন প্রক্রিয়ায় হিলিয়াম, হিলিয়াম থেকে কার্বন এবং সবশেষে ফেরাম অর্থাৎ লোহা তৈরি হয়। এভাবে প্রতিদিনই নক্ষত্রের ক্ষয় হচ্ছে অর্থাৎ হাইড্রোজেনের মজুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। হাইড্রোজেন শেষ হয়ে গেলে নিউক্লিয়ার চুলাটি বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ায় যে কেন্দ্রবহির্মুখী বল তৈরি হতো তা আর থাকবে না। নক্ষত্রগুলো হয় বিশাল আকৃতির, বিশাল বলতে আমরা যতটুকু কল্পনা করতে পারি কোনো কোনো নক্ষত্র তার থেকেও বিশাল। আমাদের সূর্যের সমান কয়েকটা সূর্যকে কোনো কোনো নক্ষত্রের ভিতর অনায়াসে ঢুকিয়ে দেয়া যাবে। এই দানবাকৃতির নক্ষত্রের মহাকর্ষ বলও যে অত্যাধিক বেশি তা তো বুঝাই যাচ্ছে। যখন নক্ষত্রগুলোর নিউক্লিয়ার চুলা বন্ধ হয়ে যায় তখন কিন্তু এই বিপুল মহাকর্ষকে ঠেকিয়ে রাখার মতো আর কোনো শক্তি থাকে না। ফলে নক্ষত্রগুলো কেন্দ্রের দিকে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। আর তখনই নক্ষত্রগুলো বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিজের জীবনের অর্জনগুলো ছড়িয়ে দেয় মহাশুন্যে,  অবশিষ্ট যে অংশটা বাকি থাকে তা থেকে তৈরি হয় ব্ল্যাকহোল বা নিউট্রন স্টার। মহাবিশ্বে যত মৌল পাওয়া গেছে, প্রাথমিকভাবে সেগুলোর সবকটিই উৎপন্ন হয়েছে নক্ষত্রের কেন্দ্রে।

 

সুপার নোভার পর তা ছড়িয়ে পরেছে চারিদিকে। আপনার শরীরে যেসব মৌল পাওয়া যাবে, কোনো না কোনো দিন তা তৈরি হয়েছিল কোনো এক অজানা নক্ষত্রের বুকে। নক্ষত্রের সন্তান আপনি, নিজেকে কখনোই ছোট ভাববেন না! যাইহোক এতক্ষন আমি মূলত টাইপ-টু (Type-II) সুপার নোভা নিয়ে আলোচনা করেছি। আরেকধরণের সুপার নোভা আছে যা টাইপ-ওয়ান (Type-I) সুপার নোভা হিসেবে পরিচিত। একটা বাইনারি স্টার সিস্টেমের (যেখানে দুইটা নক্ষত্র কমন ভরকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ঘুরে) কথা কল্পনা করা যাক যাতে একটা তারা শ্বেত বামন আর অন্য তারাটি সাধারণ কোনো তারা এবং তারা কাছাকাছি অবস্থান করছে। সাধরণত তারাটি রেড জায়ান্টে পরিণত হওয়ার পর দেখা যাবে শ্বেত বামন রেড জায়ান্ট স্টারটি থেকে পদার্থ নিজের দিকে টেনে নিচ্ছে। এভাবে শ্বেত বামন যখন পদার্থ টেনে নিতে নিতে চন্দ্রশেখর লিমিট ক্রস করবে (সূর্যের ভরের ১.৪৪) তখন আগের মতো সুপার নোভা বিস্ফোরণ ঘটবে। এ ধরণের সুপার নোভাই টাইপ ওয়ান সুপার নোভা হিসেবে পরিচিত। শেষ করার আগে একটা তথ্য দিয়ে শেষ করি। একটা সুপার নোভা  বিস্ফোরণের উজ্জ্বলতা কোনো গ্যালাক্সির উজ্জ্বলতার থেকেও বেশি হতে পারে!