Details
1253

ডার্ক ম্যাটার

ডার্ক ম্যাটার

মুসা আহমেদ আকিব

 

১৯৩৭ সাল। সুইশ-আমেরিকান বিজ্ঞানী ফ্রিটজ জুইকি কোমা ক্লাস্টারের মাঝখানের গ্যালাক্সি গুলোর গতিপ্রকৃতি হিসাব করতে গিয়ে অদ্ভুত একটা বিষয় লক্ষ্য করলেন। তিনি দেখলেন গ্যালাক্সি গুলোর গড় গতি শক্তি অদ্ভুতুড়ে ভাবে বেশি। গতিবেগের জন্য দায়ী করা যায় মহাকর্ষীয় শক্তিকে। কোনো বস্তুকে যদি ‘প্রচন্ড’ মহাকর্ষীয় শক্তি আকর্ষণ করে তাহলে বস্তুটির গতিবেগ বেড়ে যেতে পারে প্রবলভাবে। জুইকি কোমা ক্লাস্টারের দৃশ্যমান সব গ্যালাক্সির ভর যোগ করে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন, এই প্রবল গতি বেগের জন্য গ্যালাক্সি গুলোর মহাকর্ষীয় বলকে দায়ী করা যাচ্ছে না! এ ধরণের প্রবল বেগ সৃষ্টির জন্য আরো অনেক ভরের প্রয়োজন যা গ্যালাক্সিগুলোর মোট ভরের যথেষ্ট নয়।

 

সৃষ্টি হলো নতুন এক সমস্যার যা- ‘হারানো ভরের সমস্যা’ হিসেবে পরিচিত। আরও দেখা গেল গ্যালাক্সিগুলো ছুটছে তাদের মুক্তিবেগের চেয়ে বেশি বেগে (শুধু মাত্র গ্যালাক্সির ভর হিসেব করে নির্ণয় করা মুক্তিবেগ)। এ অবস্থায় ক্লাস্টারগুলো ছুটে অন্য দিকে চলে যাওয়ার কথা, কিন্তু তা হচ্ছে না। কোনো এক অদৃশ্য শক্তি তাদের বেধে রাখছে! শত মিলিয়ন বছর আগেই যেই ক্লাস্টারের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা, তা দিব্যি তার জায়গায় টিকে আছে অদৃশ্য এক বন্ধুর মহাকর্ষীয় শক্তির কল্যাণে। জুইকির এ পর্যবেক্ষণের পর বহু নদীর জল গড়াতে গড়াতে কিছু নদী শুকিয়েও গেল! পৃথিবীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক অবিশ্বাস্য রকম অগ্রগতি সাধণ হলো, মানুষ চাঁদে গেল মঙ্গলেও রোভার পাঠালো। মানবজাতির ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটলো, কিন্তু সেই হারানো ভরের সমস্যার কোনো অগ্রগতি হলো না। শুধু তাই না, আরো আরো নতুন ক্লাস্টার আবিষ্কৃত হতে থাকলো যাতে একই ধরণের ঘটনা দেখা গেল। এই অদেখা ভর এর নামকরণ করা হলো ডার্ক ম্যাটার। এই যে ডার্ক ম্যাটার মহাকর্ষ বলের প্রভাব দেখায় এটাই তাকে শনাক্ত করার একমাত্র উপায়। ডার্ক ম্যাটার যে মহাকর্ষ বল সৃষ্টি করে তা আমাদের দৃশ্যমান মহাকর্ষ বল থেকেও গড়ে ৬গুণ বেশি! এখন ভ্রু কুঁচকে আপনি আমাকে বলতেই পারেন-“তা, তুমি কি ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে জানোনা নাকি? ও জিনিসও আমরা দেখতে পাই না কিন্তু মহাকর্ষের মাধ্যমে অনুভব করা যায়। তোমার ওই ডার্ক ম্যাটার আসলে ব্ল্যাকহোল নাকি সেটা বিবেচনা করে দেখ।” তা আপনার অবগতির জন্য জানিয়ে রাখছি বিজ্ঞানীরা সে সম্ভাবনা অনেক আগেই বাতিল করে দিয়েছেন।

 

তাই যদি হতো বিজ্ঞানীরা কাছাকাছি থাকা নক্ষত্রদের উপর এতগুলা ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষীয় প্রভাব বহু আগেই ধরে ফেলতে পারতো। আপনি আরো কিছু বলার আগেই আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি ডার্ক ম্যাটার আমাদের চেনা কোনো পদার্থের সাথেই মিথস্ক্রিয়া করে না! এ থেকে একটা কথা কিন্তু বুঝা যাচ্ছে- ডার্ক ম্যাটার আমাদের চেনা কোনো সাধারণ পদার্থ দিয়ে তৈরি না। বিষয়টাকে আরো স্পষ্ট করার জন্য আমরা মহাবিশ্বে হাইড্রোজেন আর হিলিয়ামের অনুপাত দেখতে পারি। বিগব্যাং এর পর নিউক্লিয়ার ফিউশনে যে হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম তৈরি হয়েছিল, ডার্ক ম্যাটার যদি এ চেনা ফিউশন বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতো তাহলে এদের আনুপাতিক পরিমাণ হতো আরো অনেক বেশি! তাহলে এ কথা সহজেই স্বীকার করে নেয়া যাচ্ছে ডার্ক ম্যাটার আমাদের চেনা কোনো পদার্থ দিয়ে তৈরি নয়। অবশ্য ডার্ক ম্যাটারকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে মাটির নিচে গবেষণাগারে। নিউট্রিনোর (নিউট্রিনো মাটির নিচের গবেষণাগারে ধরা পড়েছিল) মতো ডার্ক ম্যাটারের কোনো কণা এসব গবেষণাগারে ধরা পরবে এই আশায় চলছে প্রচেষ্টা। তবে কোনো দিন যদি তা শনাক্ত করা সম্ভব নাও হয় আপনি কিন্তু ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারেন না। ডার্ক ম্যাটার আমাদের পরম বন্ধু, এমন এক বন্ধু যার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে আমাদের অস্তিত্ব!